কুমকুম ঘোষ কোলকাতা |
পথের শোভায় অনন্যা —মিরিক ও লেপচাজগৎ
হঠাত্ দেখা কাঞ্চনজঙ্ঘা |
নিউ
জলপাইগুড়ি ষ্টেশনে যতবার নামি মনটা আলাদা আনন্দে ভরে ওঠে
কিন্তু এবারে ২৩ শে জানুয়ারী যখন সেখানে নামলাম তখন একটা অজানা আনন্দ । এবারে
দার্জিলিং ঢুকবো মিরিক হয়ে... যেটা চেনা
পথের বাইরে... এমনটাই ভেবে এসেছি । উঁচু রেলওয়ে ওভারব্রিজ পেরিয়ে ভারী ট্রলিটা
স্লোপিং এ টানতে টানতে ভাবছিলাম যদি একটা
সঙ্গী পেয়ে যাই কিছুটা সাশ্রয় হবে, কারন যারা
দার্জিলিং বেড়াতে আসেন তারা সচরাচর এই পথ ধরেন না ...ফলতঃ জীপ বা গাড়ী যেতে চায় না সহসা কিন্তু চা
বাগানের মধ্যে দিয়ে
মিরিক লেক ও পাইনের জঙ্গল |
এক অপূর্ব রাস্তার বর্ণনা শুনেছি । ভাগ্য সুপ্রসন্ন আমাদের ,
এক
দম্পতিকে পাওয়া গেলো যারা লেপচাজগত যাবে
এবং সঙ্গী খুঁজছে শেয়ারে যাবে বলে । আমরা তো রাজি...
আরো একটা স্পট ছোঁয়া হবে বলে
।
হিল কার্ট রোড
ধরে রোহিণী সেবক হয়ে যে রাস্তা কারশিয়াং গেছে সেটা সোনাদা ঘুম হয়ে দার্জিলিং যায় । এর
দূরত্ব ৭২ কিমি । কিন্তু আমরা যাবো মাটিগারা হয়ে ।এই পথে তিস্তা নদী নেই কিন্তু আছে
পাহাড়ের ঢালে একটার পর একটা চা বাগানের অবিরাম
সবুজ সমারোহ । চা বাগানের মধ্যে দিয়ে কুমারী মেয়ের সিঁথির মতো সরু ও
পরিষ্কার আঁকাবাঁকা পথ উঠে গেছে ওপরের দিকে । তিংলিং চা বাগানের নয়নাভিরাম
গাছের ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে অপরূপা কাঞ্চনজঙ্ঘা ..লেপচাজগত |
সবুজ তখন দুচোখ ভরে
দেখেছি । দেখেছি ছোট ছোট বসতিতে
কর্মরত নারী পুরুষ, পথের ধারে খেলায় মত্ত
শিশুর চেনা ছবি । পথে পরল সৌরিনি নামের এক
ছোট গ্রাম । কিন্তু কোথাও দাঁড়াবার উপায় নেই , একে এই পথে দার্জিলিং যেতে দ্বিগুন সময় লাগে উপরন্তু আমাদের সঙ্গীদের লেপচাজগতে পৌঁছাবার তাড়া । তাই সোজা মিরিক
থামলাম । লেপচা শব্দ মির-ইওক ( Mir-Yok) যার অর্থ
“ আগুনে পোড়া জমি “ (place burnt by fire) । সেখান থেকেই এই মিরিক নামটা এসেছে । একসময় এখানে ব্রিটিশ অফিসাররা পোলো খেলত লেকের পাশে । মিরিক লেক নামে পরিচিত এই লেকের আসল নাম সুমেন্দু লেক ।
লেপচাজগতের ফরেস্ট বাংলো |
চা বাগানের মধ্যে ....আঁকাবাঁকা পথ |
ক্যাপশন যুক্ত করুন |
সারে বারোটা
নাগাদ লেপচাজগতে নেমে গেলেন আমাদের সঙ্গী সেই দম্পতী । আমরাও নেমে পরলাম।এখানে পাহাড়ের
ধাপে ধাপে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে ধূপি, ফার ও রডোডেন্ড্রন গাছ । বাইরে থেকেই ফরেস্ট
ডিপার্টমেন্টের বাড়ী টির ছবি নিলাম । নিরিবিলিতে এক-দুদিন কাটানোর জন্য এই জায়গা
আদর্শ । নির্জনতা ও নীরবতার আর এক নাম যেন লেপচাজগত । গাছের
ফাঁকে নীল আকাশে তখনো লেপ্টে আছে সুন্দরী কাঞ্চনজঙ্ঘা । সেই নীরব
ছবিকে দেখতে দেখতে মনে হোল কত যুগ ধরে
পিঠে বোঝা সহ এক পিতা ও পুত্র |
এই দৃশ্য কত হৃদয়
কে যে মোহিত করেছে তার ইওত্বা নেই । কিন্তু আমারা যে সময়ের দাস তাই আবারো উঠে পড়লাম
টাটা সুমোয় । আমাদের গন্ত্যব্য যে দার্জিলিং – পাহাড়ের রানীর দেশে । গাড়ী ছুটল ঘুম
হয়ে সোজা সেই পথে । প্রবল ঠাণ্ডা,
উজ্জ্বল নীলকান্তমণির মত ঝকঝকে আকাশে অপরূপা কাঞ্চনজঙ্ঘা আর নেতাজীর জন্মজয়ন্তীতে
উৎসবমুখর দার্জিলিং...তখন একেবারে জমজমাট ।
ছবি সৌজন্যে দেবাসীশ ঘোষ |
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন