বাপি ভট্টাচার্য
সুখ কিনেছি
এই সেদিন আমার অর্ধাঙ্গিনী রেগে
গিয়ে বললেন “তুমি সারা জীবনে আমাকে “সুখ দিলেনা”— আমারও মাথা গরম ছিলো তাকে কিছু না বলে, জামাটা গায়ে গলিয়ে
বেড়িয়ে পরি – মনে মনে প্রতিজ্ঞা করি আজ “সুখ” কিনে
বাড়ী ফিরবো না হলে ফিরবো না । কত দোকানে গেলাম, কত জনকে জিজ্ঞাসা করলাম, কেউ বলতে পারলো না “সুখ” কোথায় পাওয়া যাবে। সবাই
আমার মুখের দিকে অবাক হয়ে চেয়ে থাকে, যেনো
কোনো দিন শোনেনি “সুখের নাম”। সবাই আমাকে উল্টে বলে আপনি পেলে
আমাদের বলবেন আমরাও কিনবো । সব দোকানদাররা বলেছিলো শেষ হয়ে গেছে। এখন আর
সাপ্লাই নেই । মনে
মনে ভাবলাম নিশ্চই কালোবাজারিদের কাজ, না
হলে “সুখ” আউট অফ মার্কেট হয় ? ওরা গুদামজাত করে রেখেছে, আরও দাম বাড়লে বাজারে
ছাড়বে ।
কী করবো —
কী করবো ভাবছি, এমন সময় একটা বাচ্চা ছেলে আমার
জামা ধরে টেনে বলে —
একটা টাকা দেবেন বাবু —
মুড়ি খাবো, কাল থেকে আমরা কিছু খাইনি ।
আমি বললাম “আমরা.. আমরা মানে কী
? কে ? কে ?”
সে বলে বাবা, মা, আর আমি
। দেবেন
বাবু দিন না । মনে
মনে ভাবলাম এ বলতে পারে “সুখ” কোথায় পাবো — এরা ভিখারী সব জায়গায় ঘোরে, আমি তাকে বললাম “তুই যদি আমায় বলিস ‘সুখ’ কোথায়
কিনতে পাবো, তা হলে
আমি তোকে তোদের ভালো ভালো খাবার কিনে দেবো ।
সে কিছুক্ষণ আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে কী যেনো
ভাবে,
তারপর সে বলে, “বেশ চলুন আমি কিনে দেবো সুখ
আপনাকে”।
মহাআনন্দে চললাম তার সাথে । ছেলেটা তাদের খাবার
কিনে নিয়ে নিলো, রুটি, তরকারি ।
আমি তাকে বললাম — এই, রুটি তরকারির সাথে মাংস-ভাতও
নিয়ে নে ।
সে আমার কথা শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে
থাকে । সে
আমার কথা শুনে আর দেরী না করে মাংস ভাত কিনে নিল । তারপর সে নিয়ে চললো
তার বাসায় । গেলাম
তার সাথে তার ফুটপাথের পলিথিনের ছাউনির প্রাসাদে। সে বললো “আগে আমি আমার বাবা-মাকে
খাইয়ে নিই, তারপর বলবো”। সে তার বাবা-মাকে
খাওয়তে ঢুকে গেলো তার প্রাসাদে ।
আমি উঁকি দিয়ে দেখলাম সে তার
অস্থি সর্বস্ব বাবা মাকে খাওয়াচ্ছে, আর
তার বাবা-মা পরম তৃপ্তিতে খাচ্ছে । মুখে তাদের উজ্জ্বল
স্বর্গীয় হাসি ।
বড়
ভালো লাগলো তাদের দেখে, হটাৎ আমার মনে হলো এই
তো, এই তো, আমি যা খুঁজছিলাম, পেয়ে গেছি, আমারও চোখ দুটো জলে ভরে গেলো আনন্দে । আমি ছুটে চলে এলাম
সেখান থেকে, পিছন থেকে সে আমায় চিৎকার করে
ডাকলো, “বাবু আপনার সুখ...”
আমিও
ছুটতে ছুটতে চিৎকার করে বললাম, “পেয়ে গেছি আমার “সুখ”। সেই থেকে রোজ “সুখ” কিনতে
যাই সেই পলিথিনের রাজ প্রাসাদে,
খাবার কিনে দিয়ে আসি । এই
“সুখ” কেনার কথাটা আমার প্রাণেশ্বরীকে
বলিনি,
তাকে দিইওনি, দেবো না, সে “সুখ”। আমি একটা স্বার্থপর । তবু এই “সুখ” আমার কেনা, একান্ত আমার, এতে
কাউকে ভাগ দেবো না ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন