প্রথম বর্ষ, শারদ সংখ্যা, ১২ অক্টোবর' ২০১৫

শুক্রবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

গল্প






অরুণ চট্টোপাধ্যায়
                         বৈদ্যবাটি, হুগলী


                    মানদন্ড
অনেকদিন পর চিড়িয়াখানায় এল সৈকত এসে নেহাত খারাপ লাগল না তার চেনা প্রকৃতি থেকে সম্পূর্ণ এক আলাদা জগৎ বিশাল এক ঘেরা জায়গায় কত বিচিত্র প্রাণীর মেলা ছেলেবেলায় অনেকবার এলেও এবারকার আসাটা যেন একটু অন্য রকমের মানুষ ছাড়াও যে জগতে এত রকম প্রাণী থাকতে পারে এটা সে প্রায় ভুলতেই বসেছিল তবু তার ছেলেবেলার স্মৃতি একটু উস্কে দেবার জন্যে এ ভ্রমণ বেশ একটু প্রীতিকর লাগল
সঙ্গে এসেছিল তাপস তার আর এক ব্যাচেলর বন্ধু বছর পাঁচেক হল চাকরি করছে দুজনে এবার বিয়ে করে সংসার-ধর্ম করবে এমনটাই মতলব বিয়ে করার আগে বন্ধুরাই তো বাঁচিয়ে রাখে মানে ছন্দের স্রোতে ভাসিয়ে রাখে, একঘেয়ে হতে দেয় না তাই সৈকত বেঁচে আছে তাপসের বন্ধুত্বের জোরে আর তাপসও তাই মানে সৈকতের বন্ধুত্বে
খুব মজা করছিল সেদিন দুজনে মানুষ দেখতে দেখতে কেমন একঘেয়ে হয়ে গিয়েছিল কিন্তু এখানে এত রকম পশু, এত রকম তাদের আচার আচরণ, খাবার দাবার আর হাঁকডাক, আওয়াজ সব বেশ উপভোগ করছিল তারা
বাঘের খাঁচায় বিশাল বাঘ পায়চারি করছে হাতি, গন্ডার, হরিণ, জেব্রা, জিরাফ, উল্লুক, কুমির, সিংহ, সাদাবাঘ, ভালুক আর কত কি আর কত বিচিত্র রকমের পাখি কি অদ্ভুত আর সুন্দর বিচিত্র রঙ আর রূপ এক একটা খাঁচার সামনে বিশাল জটলা ছেলে-মেয়ে-বুড়ো-বুড়ি সকলেই ছুটির দিনটা ইনভেস্ট করে আনন্দের পশরা মনে তুলতে আগ্রহী
শিম্পাঞ্জী, বানরদের খাঁচার সামনে বিশাল ভীড় কেউ কলা খাওয়াচ্ছে কেউ দাঁত ভ্যাঙ্গাচ্ছে বানরগুলো তেড়ে তেড়ে আসছে কিন্তু জালের ঘেরাটোপে বন্দী যারা তারা শুধু অসহায় আস্ফালন করছে আর তাদের সেই অসহায়তা বেশ উপভোগ করছে জনতা
তাপস হাততালি দিয়ে উৎসাহ দিচ্ছে ওদের মানে যারা টিজ করছে জন্তুদের মাঝে মাঝে সৈকতের দিকে তাকিয়ে তাকেও উৎসাহ দেবার চেষ্টা করছে সৈকতের তেমন ভাল লাগছিল না বিষয়টা এক তো পশুদের বিরক্ত করাটায় সে তেমন উৎসাহ পায় না আর দুই, ব্যাপারটায় তাপসের ছেলেমানুষিটাও তার মোটেই ভাল লাগল না কিন্তু কিছু বলতে গেলে যদি হিতে বিপরীত হয় তো তাই চুপ করেই রইল কিন্তু তাপসের আনন্দ আর উত্তেজনা যতই বাড়ে সৈকতের মুখটা ততই বেশী ম্লান হতে থাকে অস্বস্তিতে
ফেরার সময় নিজের পাড়ায় ঢোকার সময় আর এক বিপত্তি বিশে পাগলাকে কে একজন খেপিয়ে দিয়েছে আর সে তো একেবারে ধেই ধেই করে নাচছে মুখে তার এনতার গালাগাল মাথায় তার অবিন্যস্ত চুল আর জটা একটা ছেঁড়া পায়জামা আর একটা ছেঁড়া গেঞ্জি তার পরণে শীতেও কোনও বোধ নেই বিশে পাগলার  
উনি বিশ্বনাথবাবু মানে এককালে ছিলেন আজ ভাগ্যের দোষে হয়েছেন এই বিশে পাগলা ছিলেন স্কুলের মাস্টার মশাই একদিন কোনও কারণে মাথার দোষ দেখা দিল প্রথমে বোঝানো হচ্ছিল পাড়াপড়শি থেকে শুরু করে বন্ধু-বান্ধব আত্মীয়স্বজন সব এসে হুমড়ি খেয়ে পড়ল পরামর্শ দিতে হল না দেখে এল ডাক্তার কিন্তু ওষুধ খাওয়ানো গেল না অতএব অ্যাসাইলাম কিছুদিন পরে পালিয়ে এলেন সেখান থেকে নিন্দুকেরা বলে সে নাকি অ্যাসাইলামের অত্যাচারের ফল আর অ্যাসাইলামের ডাক্তার বলছে অন্য কথা বলছে এ রুগীর এটাই বৈশিষ্ট
বাড়ি থেকে আর কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয় নি হ্যাঁ, একটা ব্যবস্থা অবশ্য নেওয়া হয়েছিল তাঁকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল বিয়ে করেন নি ছেলেমেয়ে নেই কিন্তু বাড়িতে অন্য সবাই আছে তাদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই এ ব্যবস্থা
সেই থেকে বিশে পাগলার পাকাপাকি ঠিকানা রাস্তা আর সেনশর্মাদের গ্যারেজের পেছনের একটা ভাঙ্গা শেড যে যখন যা দেয় তাই খায় আবার কখনও খায় না কারণ ওই যে ডাক্তাররা বলে এ রুগীর নাকি এটাই বৈশিষ্ট
জনতা খুব উত্তেজিত তারা হাততালি দিচ্ছে আর নানান অঙ্গভঙ্গি করছে তাপস মিলে গেল ওদের সঙ্গে তার তো খুব উৎসাহ দারুন মজায় বিশে পাগলাকে বিরক্ত আর উত্তেজিত করতে লাগল
তাপস মাঝে মাঝে সৈকতের দিকে তাকাচ্ছে তার চোখের ভাষায় তাপসকে সমর্থনের আহ্বান হঠাৎ সৈকতের চোখের সামনে চলে এল খানিক আগে দেখা চিড়িয়াখানার সেই দৃশ্যটা দর্শক এক দৃশ্যও এক কি অদ্ভুত মিল

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন