প্রথম বর্ষ, শারদ সংখ্যা, ১২ অক্টোবর' ২০১৫

শুক্রবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

ইচ্ছের ভ্রমণ

কুমকুম ঘোষ
কোলকাতা
পঞ্চলিঙ্গেশ্বর--
              প্রকৃতি ভক্তি মিলেমিশে একাকার
         রুক্ষ পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসছে জলস্রোত আর সেখানে সারাবছর চুপ করে ডুব  দিয়ে থাকেন স্বয়ং শিবএকটি দুটি নয় পাঁচটি শিবলিঙ্গ একসাথে অবস্থান করছে যুগ যুগ ধরে এবং এ জন্যই এই জায়গার  নাম পঞ্চলিঙ্গেশ্বর । উন্মুক্ত আকাশের নীচে মন্দির । স্থাপত্য বলতে এর প্রাকৃতিক অবস্থান। পাথরের গা বেয়ে নেমে আসা ঝর্ণাধারা। চারপাশের জঙ্গল আর ভক্তের হৃদয় । দেবতা এখানে মন্দিরের চার দেওয়ালের মধ্যে বন্দী নন । তাঁকে দেখাও যায় না । স্পর্শ  করতে হয় পাথরের ওপর সটান শুয়ে পরে এক অভিনব তীর্থক্ষেত্র—পঞ্চলিঙ্গেশ্বর । উড়িষ্যার বালাশোর জেলায় নীলগিরি  পাহাড়ের একটি টিলার ওপরে এক হিন্দু তীর্থক্ষেত্র । তবে শুধু ধর্মীয় আবেগ নয় প্রাকৃতিক শোভায় মন কেড়ে নেওয়ার মত স্পট এটি । 
বাংরিপসি থেকে বারিপদার রাস্তা 
       বাংরিপোসি থেকে ভোর ছ’টার একটু পরে বেরিয়ে সাড়ে সাতটা নাগাদ  বারিপদা শহরের মূল কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে আমরা সবাই গলা ভিজিয়ে নিচ্ছিলাম । লিকার চায়ের স্বাদটা অন্যরকম । দোকানীকে জিজ্ঞেস করতে বললেন চিনি ও গোলমরিচ দেওয়া । অপ্রস্তুত বাঙালী রসনা তার স্বাদ ঠিক গ্রহণ করতে পারছিল না । ফেলেও দিতে পারছিনা । খেয়েই নিলাম ।  ময়ুরভঞ্জ জেলার  বারিপদাকে দ্বিতীয় শ্রীক্ষেত্র (পুরি) বলা হয় । পুরীর পর  সবচেয়ে বড় রথযাত্রা এখানেই হয় ।  সেখানেই স্থানীয় লোকদের থেকে জেনে নিলাম কোন দিকে যাবো । একটু এগিয়ে তিনটে রাস্তা । একটা গেছে কলকাতার দিকে,একটি ভুবনেশ্বরের দিকে আর মাঝের টি বালাশোরের দিকে । আমরা সেটাই ধরলাম । এই রাস্তা দিয়ে চাঁদিপুর কে পাশ কাটিয়ে সোজা পঞ্চলিঙ্গেশ্বর । ট্রেনে হাওড়া থেকে বালাশোর ষ্টেশনে নেমে এখানে আসার সহজ পথ ও আছে । 
ওটিডিসীর হোটেল পান্থশালা
         ওটিডিসির হোটেল পান্থশালায় পা দেবার সাথে সাথে আবার বৃষ্টি শুরু। বুকিং না থাকলেও ঘর পেতে অসুবিধা হলো না। হোটেলের জানলা থেকে দেখছি নীলগিরি পাহাড়টা যেন সেই ধারাস্নানে ধুয়ে নিচ্ছে সময়ের ধুলো । পঞ্চলিঙ্গেশরকে জড়িয়ে আছে প্রাচীন কাহিনী । কথিত আছে রামচন্দ্রের স্ত্রী সীতা দেবী নির্বাসনে থাকার সময় এখানে শিবের আরাধনা করতেন আরএকটি কাহিনী এই যে রাজা বানাশূর স্বয়ম্ভূ শিবকে এখানেই পূজো দিতেন। কিন্তু সেই বৃষ্টির মধ্যে আর তখন দেবদর্শনে গেলাম না আমরা । ঠিক হলো পরদিন সকাল সকাল বেরিয়ে পরবো ।                                                                           
পরিচ্ছন্ন পান্থশালা ও দূরে নীলগিরি পাহাড় 
     পরদিন ও সকাল থেকেই মাঝারি বৃষ্টি পড়ছিল কিন্তু আমরা তার মধ্যেই যাবো কারণ সেদিন  আমাদের কলকাতা ফিরতেই হবে । ১ কিলোমিটার গিয়েই গাড়ির পথ শেষ । পারকিং এ গাড়ি রেখে আমরা পায়ে হেঁটে এগোলাম । দুপাশে অজস্র ছোট ছোট দোকান কিন্তু বন্ধ। বৃষ্টিও পরছে সমানতালে । একটা খোলা দোকানে দুজন দোকানী বসে আছে ।তারাই জানালো পূজারী বাম্ভ্রণ সেই বৃষ্টির মধ্যেও পৌঁছে  গেছেন মন্দিরে । তারা পূজা  দেবার উপাচার ও বিক্রি করেন । সেসব সংগ্রহ করে আরো এগিয়ে গেলাম । পাশ দিয়ে একটা ছোট  জলধারা ওপর থেকে নেমে আসছে প্রবল বেগে । পরে আবিষ্কার করলাম এটাই সেই জলস্রোত যেটির নীচে শিব অবগাহন করে আছেন পুরাণ থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত ।
ছবি সৌজন্যে
দেবাসিশ ঘোষ
  
      পাহাড়ের ধাপকে সুন্দর করে  কেটে তৈরি করা হয়েছে সিঁড়িগুলো । মোট ৩১১ টি মাঝে বিশ্রাম নেওয়ার জায়গা আছে  খানিকটা করে ওঠার পরেই  ।  যেখানে তখন কিছু গরু ও  ছাগল আশ্রয় নিয়েছে । এরা হয়ত কাছের কুলডিহা গ্রাম থেকেই এসেছে কারন এই টিলাটির অবস্থান ঐ গ্রামেই ।  অবশেষে মন্দির প্রাঙ্গনে পৌঁছলাম । প্রশস্ত চাতালে শিবের ত্রিশূল ও প্রতীকী শিবলিঙ্গ আছে । পূজো এখানে ই  দিতে হয় । চাতালের পাশেই সেই ঢালু পাথরটি যার খাঁজে শিব লুকিয়ে আছেন ।       
 নীলগিরি  পাহাড়ের মাথায়
মেঘ আটকে আছে 
এই রাস্তা গেছে মন্দিরের দিকে
     এখন ভরা বর্ষা তাই জলের স্রোত ও বেশী । শুনশান মন্দির । একজন বর্ষাতি গায়ে চাতালের জল ও খসে পরা পাতা সরিয়ে দিচ্ছে ।কয়েক ধাপ নেমে প্রাঙ্গনে এসে দাঁড়ালামপ্রবল বৃষ্টি ও পাহাড়ের  গা বেয়ে নেমে আসা জলস্রোতের আওয়াজ ছাপিয়ে ঘন্টার আওয়াজ ও পুরোহিতের মন্ত্রোচ্চারণ সৃষ্টি করেছে এক স্বর্গীয় পরিবেশ । পূজো দিয়ে এবার আমরা নামতে শুরু করলাম । দু একটা দোকান  খুলেছে । তার একটাতেই কিছুক্ষণ বসে গরম চা খেয়ে নেমে এলাম পান্থশালা । এবার ঘরে ফেরার পালা ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন