প্রথম বর্ষ, শারদ সংখ্যা, ১২ অক্টোবর' ২০১৫

সোমবার, ১২ অক্টোবর, ২০১৫

ইচ্ছের রান্নাঘর


                                                            শ্যামলী পাল

      আকাশে বাতাসে পুজোর গন্ধ । ছেলে মেয়ের নতুন জামা কাপড় কেনার জন্য বেশ কদিন ধরে বাজার যাওয়ার আনন্দ । তারপর ঘরে ফিরে ট্রায়াল দেওয়ার জন্য সেই জামা কাপড় পড়ে ওদের খুশী খুশী মুখ এসব দেখে সোমার বেশ আনন্দে ভরে উঠছিল মন । দুর্গা পূজো এলে কেমন যেন চারিদিকের সব কিছু বদলে যেতে শুরু । মন আনন্দে ভরে ওঠে নানা কারণে । নতুন শাড়ী, প্রতিদিন সবাই মিলে ঘুরতে যাওয়া, নানা গান, অরূপের অফিস ছুটি, তাই ওর ঘরে থাকা, শারদ পত্রিকায় কিছুটা চোখ রেখে সময় কাটানো । সব কিছু ভালোর মধ্যেও পুজোর আসলেই সোমার একটা চিন্তাও কিন্তু মনে মনে দানা বাঁধে । এই চারদিনে অরূপ থেকে শুরু করে ছেলে মেয়ে সবাই স্পেশাল খাবারের বায়না জুড়বে । সারা বছর যা খায় সে মেনু তাদের চলবে না । না করে দিতে পারলে সোমারও ভাল লাগে না । এমনিতে তো ছেলে মেয়েরা স্কুল আর অরূপ অফিস যাওয়ার সময় ঠিক মত খেয়ে যেতেও পারেনা । অত সকাল সকাল জমিয়ে রান্না করাও সম্ভব নয় । ছুটির দিনেও চিকেন, মটন যতই করে দাও । সেটা অরূপ বা ছেলে মেয়ের পুজোর সময় মনে থাকে না । তাদের পূজোতে স্পেশাল মেনু চাই-ই চাই । সোমাও এই সমস্যার মুশকিল আসান করতে শেফ শ্যামলী পালের সাথে ভাব জমিয়ে নিয়েছে । পূজো আসলেই সে শ্যামলীদির শরণাপন্ন হয় । ফোন করে প্রতিদিনের দুপুরের স্পেশাল রান্না আর বিকেলের টিফিনের খবর জেনে নেয় । এবারে শেফ শ্যামলী পাল-এর পূজোর স্পেশাল মেনু......
সপ্তমীর দুপুর
চিকেন কোরমা
উপকরণ
চিকেন, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, কাঁচা লঙ্কা, গোলমরিচ, কাজু, চারমগজ, বাদাম, পোস্ত, টমেটো, কস্তূরী মেথি পাতা, চিকেন মশলা, টক দই, নুন ।  
                  প্রণালী     
      প্রথমে একটু নুন আর তেল  দিয়ে চিকেন কুকারে  সিদ্ধ করে নিন । পেঁয়াজ ভেজে বেটে রাখুন । কাঁচালঙকা, গোলমরিচ, আদা, রসুন এক সাথে বেটে নিন । আর কাজু.বাদাম, পোস্ত, চারমগজ ও বেটে রাখুন । টমেটো ভালো করে বেটে নিন ।
      প্রথমে গ্রেভি তৈরি করুন ... প্রথমে তেল গরম করে টমেটো বাটা দিয়ে খুব ভালো করে ভাজুন । তারপর আদা, লঙ্কা, রসুন, বাটা দিয়ে নাড়ুন আর ভাজা পেঁয়াজ বাটা দিয়ে দিন । নুন দিয়ে একটু মশলাটা কষিয়ে নিয়ে, কাজু বাটাটা দিয়ে একটু নাড়িয়ে নিয়ে সিদ্ধ করা চিকেন এর জল দিয়ে দিন । তারপর চিকেন দিন । একটু চিকেন মশলা, একটু কস্তূরী মেথি পাতা, আন্দাজ মতো নুন দিয়ে কিছু সময় রান্না করুন । এবার দই ফেটিয়ে দিয়ে দিন আর একটু সময় ধিমে আঁচে বসিয়ে রাখলেই রেডি আপনার চিকেন কোরমা । গরম গরম পরিবেশন করুন । 
সপ্তমীর বিকালের জলখাবার

চিড়ের কাটলেট  
উপকরণ        
চিড়ে, সিদ্ধ আলু, আদা বাটা, লঙ্কা বাটা, ধনেপাতা কুচি, নুন, চিনি, ময়দা, সুজি । 
প্রণালী  
প্রথমে চিড়ে একটু জল দিয়ে ভিজিয়ে নিন । এবারে এর মধ্যে সিদ্ধ আলু, আদা লঙ্কা বাটা, কুচানো ধনেপাতা, আন্দাজ মতো নুন, চিনি দিয়ে ভালো করে মেখে গোল গোল কাটলেট সেপ দিন । এবার একটু ময়দা, নুন আর জল দিয়ে গুলে রাখুন । তারপর তেল গরম করুন আর বানিয়ে রাখা কাটলেট কে ময়দার ঘোল এ ডুবিয়ে সুজিতে কোটিং করে লাল করে ভেজে নিলেই রেডি আপনার চিড়ের কাটলেট । চা এর সাথে  গরম গরম পরিবেশন করুন 

অষ্টমীর দুপুর
নিরামিষ দম বিরিয়ানী
উপকরণ 
বাসমতী চাল ৫০০ গ্রাম, আলু ৫০০ গ্রাম , টক দই ৩০০ গ্রাম, দুধ ১/২ কাপ, আদা, রসুন, কাচা লঙ্কা বাটা, পিয়াজ কুচানো, নুনপোস্ত বাটা, চিনি, সব গরমমসলা (ছোট এলাচ, বড় এলাচ, চাকলি ফুল, জয়িত্রী, লবঙ্গ, দারচিনি, গোলমরিচ) একটু কেশর রঙ ।        
প্রণালী
প্রথমে চাল ভিজিয়ে রাখুন ।
আলু একটু নুন হলুদ লাগিয়ে ভেজে নিন । এবার কিছু পিয়াজ ভালো করে ভেজে তুলে রাখুন আর গরমমসলা গুলো  পাউডার করে নিন । তারপর যে পাত্রে রান্না করবেন তার মধ্যে দই টা ভালো করে ফেটিয়ে নিন । এবার এর মধ্যে এক এক করে কুচানো পিয়াজ, আদা, রসুন, লঙ্কা বাটা, পোস্ত বাট, গরমমসলা পাউডার, নুন, চিনি, ভাজা আলু সব কিছু ভালো করে মিশিয়ে নিন। এবার উপরে গরম তেল ঢেলে দিন আর পাত্রটি ধরে আঁচে বসিয়ে দিন । একটু সময় রান্না   

করতে থাকুন । খেয়াল রাখবেন আলু বেশি সিদ্ধ না হয়ে যায় পাশে ভাতটা ও একটু নুন ও তেজ পাতা দিয়ে আধা সিদ্ধ বানিয়ে নিন । তারপর আধা সিদ্ধ ভাতটা রান্না আলুর পাত্রের উপর ঢেলে দিয়ে আঁচ একদম কমিয়ে রাখুন । এবার হাতা দিয়ে ভাত গুলো চারিপাশে চেপে চেপে  মাঝখানে গোল জায়গা করুন । উপর থেকে ঘি গরম করে দিয়ে দিন ।তারপর দুধ দিয়ে কেশর রঙ গুলে ছিটিয়ে দিন আর পেঁয়াজ ভাজা ছড়িয়ে দিয়ে ভালো করে ঢাকনা দিয়ে কম আঁচে বসিয়ে রাখলেই রেডি আপনার দম বিরিয়ানি । পরিবেশন করবার সময় একটু করে সাইড থেকে কেটে কেটে গরম গরম পরিবেশন করুন ।
অষ্টমীর বিকেলের জলখাবার
স্প্রিং রোল
উপকরণ 
আলু, বাঁধাকপি, সিমলা লঙ্কা, পেঁয়াজ, পেঁয়াজ পাতা, বিট নুন, রেড চিলি সস, গ্রিন চিলি সস, গমের আটা ।
প্রণালী
প্রথমে আটা একটু শক্ত করে মেখে রাখুন । আলু সিদ্ধ করে নিন । আর সব তরকারি ভালো করে কুঁচিয়ে রাখুন । পেঁয়াজ আর পেঁয়াজ পাতা ও কুচিয়ে নিন । এবার সব কুচানো তরকারির সাথে সিদ্ধ করা আলু, সব সস, বিট-নুন, পেঁয়াজ পাতা, কুচানো পেঁয়াজ ভালো করে মিশিয়ে পুরটা বানিয়ে রাখুন । তারপর মেখে রাখা  আটা দিয়ে ছোট ছোট রুটি বানিয়ে নিন আর রুটি র মধ্যে রেডি করা পুর ভড়ে রুটি কে রোল করে গড়ে নিন.রোল এর দুই মুখ ভালো করে বন্ধ করে দিন । এবার তেল গরম করে ছাঁকা তেলে ভেজে তুললেই রেডি আপনার রোল ।
ছুরি দিয়ে ভালো করে কেটে নিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন ।
নবমীর দুপুর
মটন রেজালা
উপকরণ 
মটন, টমেটো, পেঁয়াজ, আদা, রসুননারকেল, কাজুবাদাম, পোস্ত, শুকনো কা. নুন, হলুদ, ধনেগুরো, টক দই, গরমমসলা,
(এলাচ, বড় এলাচ, দারচিনি, লবঙ্গ, গোলমরিচ, জয়িত্রী, চাকলি ফুল ) এক সাথে গুরো করে গরমমসলা বানিয়ে নিন ।

প্রণালী
        প্রথমে মটন নুন আর টমেটো দিয়ে কুকারে সিদ্ধ করে নিন। এবার আদা, রসুন, শুকনো লঙ্কা এক সাথে বেটে নিন । এবার কাজু, নারকেল, পোস্ত, এক সাথে বেটে রাখুন । পেঁয়াজ কুচিয়ে নিন । এবার কড়াই এ তেল গরম করে পেঁয়াজ কুঁচি একটু ভেজে নিয়ে আদা, রসুন, লঙ্কা বাটা দিয়ে দিন । তারপর সিদ্ধ করা মটন দিয়ে দিন এবং ভালো করে নাড়ুন । এবার ধনে গুরো, হলুদ, আন্দাজ মতো নুন দিয়ে একটু কষে নিন ।   
নারকেল, কাজু, পোস্ত বাটা দিয়ে দিন। ভালো করে মিশিয়ে নিয়ে বানানো গরমমসলা দিয়ে সিদ্ধ করা মটন এর জল টা দিয়ে দিন । আর ঢাকনা দিয়ে কিছু সময় রান্না করুন ।
এবার ঢাকনা খুলে দইটা ফেটিয়ে দিয়ে দিন । আঁচ কমিয়ে আরও একটু সময় বসিয়ে রাখলেই রেডি আপনার                                 মটন রেজালা ।
নবমীর বিকেলের জলখাবার
সয়াবিন মানচুরিয়ান
উপকরণ 
সয়াবিন, ময়দা, এরারুট পাউডার,আদা, রসুন, কাঁচা লঙ্কা, নুন, সয়াসস্, একটু ফুড কালার, পেঁয়াজ পাতা  
প্রণালী
প্রথমে সয়াবিন একটু নুন দিয়ে সিদ্ধ করে নিন । আদা, রসুন, কাঁচা লঙ্কা এক সাথে বেটে রাখুন । এবার সিদ্ধ করা সয়াবিন টুকরো টুকরো করে কেটে নিয়ে এর মধ্যে ময়দা,এরারুট,বেটে রাখা মসলা, সয়াসস্ আন্দাজ মতো নুন একটু কালার সব দিয়ে ভালো করে মেখে নিন । তারপর তেল গরম করে ছাঁকা তেলে একটু একটু করে ভেজে নিলেই রেডি আপনার সয়াবিন মানচুরিয়ান । পেঁয়াজ পাতা দিয়ে সাজিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন ।
দশমীর দুপুর
মাছ পোস্ত 
উপকরণ
রুই মাছ, পোস্ত বাটা, কালো জিরে, কাঁচা লঙ্কা, একটু সামান্য রসুন বাটা, নুন, হলুদসামান্য একটু চিনি ।
প্রণালী
প্রথমে নুন হলুদ মাখিয়ে মাছ একটু ভেজে রাখুন ।এবার কড়াই এ তেল গরম করে কালো জিরে ফোঁড়ন দিয়ে ভাজা মাছটা দিয়ে দিন । বাটা মশলাটাও দিয়ে দিন । একটু নাড়িয়ে নিয়ে আন্দাজ মতো জল, নুন আর হলুদ দিয়ে ঢাকা দিয়ে একটু সময় রাখলেই রেডি আপনার মাছ পোস্ত । চাইলে উপরে একটু কাঁচা তেল ছড়িয়ে দিন । গরম ভাত এর সাথে পরিবেশন করুন ।
দশমীর বিকালে মিষ্টি মুখ
সুজির নাড়ু
উপকরণ
সুজি ১ কাপ, ময়দা  ১ কাপ, চিনি  ১ কাপ, কুড়ানো নারকেল ১ কাপ
প্রণালী
সুজি, ময়দা, নারকেল, চিনি সব সমান পরিণাম নিতে হবে। এবার সব কিছু এক সাথে ভালো করে মিশিয়ে পুরো রাত রেখে দিন । তারপর সকালে ভালো করে চটকে মেখে নিয়ে গোল গোল বল বানিয়ে নিন । এবার মিডিয়াম আঁচে তেল গরম করে ছাঁকা তেলে ভেজে তুললেই রেডি আপনার সুজির নাড়ু । গরম গরম পরিবেশন করুন ।
       সোমা দারুণ খুশী । স্পেশাল মেনুর সাথে একটু ঘরোয়া কিছু করে নিলেই এবারের পূজোতে অরুপ আর ছেলে মেয়েদের তাক লাগিয়ে দেবে সে । 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন