স্তন
ক্যান্সারে চিকিৎসার সাথে সাথে প্রয়োজন মানসিক আনন্দ
কেউ যখন স্তন
ক্যান্সারে আক্রান্ত্র হন তখন তা
যে কেবল তার উপর প্রভাব ফেলে তাই নয়, পরিবার, বন্ধু-বান্ধব,
আত্মীয়-স্বজনের উপরও
এর প্রভাব ফেলে । বিশেষ করে জীবন সঙ্গীকে মারাত্মক রকমের প্রভাবিত হতে দেখা যায় ।
সংকটাপন্ন এমন রোগীর জন্য, চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় জীবন সঙ্গীর
সাহায্য, সহানুভূতি, অবলম্বন ও ভালোবাসা খুবই প্রয়োজন ।
স্তন ক্যান্সার চিকিৎসা যখন চলে, নানা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা যায়
রোগীর শরীরে। অস্ত্রোপচার করা হলে এবং লসিকাগ্রন্থি সরিয়ে নিলে ফুলে যায় বাহু ।
কেমোথেরাপি নিলে হয় বমি বমি ভাব, বমি, কেশহানি, ক্ষুধামন্দা ও ওজন হ্রাস । বিকিরণ
চিকিৎসায় অবসাদ, ক্লান্তি, স্তনে ব্যথা,
স্তন আয়তনে পরিবর্তন
ইত্যাদি ইত্যাদি । শারীরিক কষ্টে ও মানসিক দ্বন্দ্বে রোগীর আবেগ মেজাজেরও পরিবর্তন
হয় ।
প্রিয়জনের স্তন ক্যান্সার হলে তাকে অবলম্বন দিতে
হবে । আপাত: দৃষ্টিতে এটা সহজ মনে হলেও বাস্তবে তা সব সময় হতে দেখিনা আমরা । শুধু
সঙ্গে থাকলেই হবে না, রোগীর প্রতিটি বিষয়কে বোঝার চেষ্টা করতে
আন্তরিকভাবে । প্রিয় খাবারও অনেক সময় রোগীর কাছে বিস্বাদ হয়ে উঠে । এমন কিছু
চিকিৎসা আছে যা নেওয়ার পর আগের প্রিয় খাবার তখন ভালো লাগে না । অনেকে স্বাভাবিক
সময় যে খাদ্য উপভোগ করতেন এসব খাবার এখন এড়াতে চাইতে পারেন । অনেক নারী চান
ডাক্তারের কাছে যেন তাঁর জীবনসঙ্গী তাকে নিয়ে যান এবং সঙ্গে থাকেন । চিকিৎসা হোক
বা মামুলী চেক আপ হোক, ডাক্তারের সঙ্গে এমন সেশন বেশ ক্লান্তিকর হয়ে উঠে
এক সময় । সে সময় কেউ যদি পরামর্শগুলো নোটবুকে টুকে নেন,
দেখভাল করেন,
পরে বাড়ি নিয়ে যান
তখন রোগী বেশ স্বস্থি অনুভব করেন । যতটুকু অন্তরঙ্গ হলে রোগী স্বস্তি পান ততটুকু
তাকে দিলে ভালো । চিকিৎসায় যৌন ইচ্ছা কমে যেতে পারে কিন্তু শারীরিক ঘনিষ্ঠতা তিনি
চাইতে পারেন । সেদিকে খেয়াল রাখবেন জীবন সঙ্গী ।
মানুষ যখন চাপে থাকে তখন মন খুলে কথা বলার লোক পেলে
মানুষ স্বস্তি পায় । আশ্রয় খোঁজে কারো, যিনি কান পেতে তার কথাগুলো শুনবেন,
শেয়ার করবেন তার
সঙ্গে । জীবন সঙ্গীর কাছে এমন চাহিদা থাকতেইে
পারে । গবেষণায় দেখা গেছে চিকিৎসা চলার সময় দম্পতি যখন মন খুলে কথা বলেছেন,
সেক্ষেত্রে রোগীর
দুর্ভোগ অনেক কমে, সম্পর্কের তুষ্টিও হয় এতে বেশি । রোগ নির্ণয়ের পর
অনেক সিদ্ধান্ত নিতে হয়, সেসময় জীবন সঙ্গীর সক্রিয় ভূমিকা বাঞ্ছনীয় ।
প্রয়োজন হতে পারে দ্বিতীয় মত নেওয়ার । জীবন সঙ্গীকে ভালো শ্রোতা হতে হয় । সঙ্গী ভয়
পেলে সে ভয়কে স্বীকার করে তাকে আশ্বস্ত করতে হয় । চট জলদি সমাধান দেবার লোভ
সামলানো উচিত, হয়ত এরকম করলে তার উদ্বেগকে তুচ্ছ করার মত ব্যাপার
ঘটে, অন্তত:
রোগী তা মনে করতে পারেন, আর এরকম মনে হলে অভিমানে হয়ত মনের দুঃখ কষ্টের কথা
আর তিনি বলবেনই না ।
রোগীকে যেমন উৎসাহ দিতে হবে,
তেমনি চিকিৎসার
বাস্তব দিক নিয়ে সঠিক ধারণাও কৌশলে তাকে
জানানো উচিত । ধৈর্য রাখা বড় কথা । স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসায় নারীর হরমোনসমূহ
বিশৃঙ্খল হতে পারে, তখন মন মেজাজ খারাপ হওয়া,
বিরক্তির-ভাব প্রায়ই
হওয়া খুবই স্বাভাবিক । মনে জমে উঠা বাষ্প বের হবার পথও চাই তাদের । এজন্য প্রয়োজন
ক্যান্সার সাপোর্ট গ্রুপ । রোগীর ভাল লাগার সমস্ত উপায়ের আয়োজন করাটাই তাকে সুস্থ
করে তোলা বা তার আয়ুকে দীর্ঘায়ত করার একটা বড় দিক । শুধু মাত্র চিকিৎসা নির্ভর হলে
রোগ নিরাময়ের সম্ভাবনা কমে যায় ।
যিনি
রোগীর অবিরাম সঙ্গী, তিনি যেন ভেঙ্গে না পড়েন । রোগীর সাথে সাথে থাকতে
থাকতে তাকে অবলম্বন দিতে দিতে তার নিজেরও একসময় ক্লান্তি আসতে বাধ্য । ক্লান্তি,
হতাশা মনকে আছন্ন
করলেও সঙ্গী প্রিয়জনের কথা ভেবে সহ্য করতে হবে । যিনি পরিচর্যা দেন রোগীকে,
তারও চাই মন ভালো
রাখার মত কাজ করতে হবে অন্যান্য সবাই কে । একটা কথা মনে রাখা দরকার হতাশা কিন্তু
রোগীকে ঘিরে যারা থাকেন তাদের সবার মধ্যেই বাসা বাঁধে । সেই হতাশা প্রকাশ পেলে
রোগীকেও অচিরেই গ্রাস করবে । রোগীর যথাযথ অবলম্বন হয়ে উঠার জন্য সবাইকেই হতে হয়
শান্ত, স্থির,
ধৈর্যশীল ও প্রফুল্ল
। তাই সবারই উচিত হতাশায় না ডুবে গিয়ে ভাল লাগার বিষয়গুলিকে আরও বেশী করে আঁকড়ে
ধরা । রোগীর পরিচর্যাকারী বা কেয়ার লিডার
যেন বিষণ্ণতা ও উদ্বেগের শিকার না হন তাও দেখতে হবে বিশেষ যত্ন সহকারে । রোগী,
তার সবচেয়ে কাছের
সর্বক্ষণের সঙ্গী, তার কেয়ার লিডার – এদের ঘিরে থাকা প্রতিটি মানুষকেই শুধু
সহানুভূতিশীল হলেই হবে না, এদের মানসিকভাবে খুশী রাখার জন্য সমস্ত
উপায় অবলম্বন করতে হবে । সংঘবদ্ধ লড়াই রোগীকে অনেক খোলামেলা ও সাহসী করে তুলতে
পারে । স্তন ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই-এ এই সাহসের প্রচণ্ড রকম প্রয়োজন আছে ।
রোগীকে সুস্থ বা তার
দীর্ঘমেয়াদী আয়ু নির্ভর করে এর উপরেই ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন