জয়িতা দে সরকার
দূর্গাপুর, বর্ধমান
শেষ বেলায়
পশ্চিমের আলোর মতন অস্ত যাচ্ছে রত্নার প্রাণ বায়ু,
কিছু কিছু প্রাণ শরীর থেকে আলাদা করে নিয়ে যেতে স্বয়ং যমরাজেরও মনে
হয় ইচ্ছে করেনা,আর মৃত্যুর কারণ যখন শুধু মাত্র অবহেলা আর
অভিমান হয় তখন স্বয়ং স্রষ্টাও মনে হয় তাঁর বিধির লিখনের উপর বিশ্বাস হারায় আর
ভাবে...লেখার সময় আরও একটু খেয়াল করা উচিৎ ছিলো কি !
ফ্যালফ্যালে ফ্যাকাসে দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রত্না,কিছু বলতে চাইছে, কিন্তু আর ক্ষমতা নেই,শ্বাসরোধ হয়ে আসছে। খাটের পাশে আসামীর মতন দাঁড়িয়ে আছে দেবাশীষ, আর কলি-রত্না আর দেবাশীষের একমাত্র মেয়ে একভাবে মায়ের বুকের কাছে শুয়ে
কেঁদে যাচ্ছে (বয়স তেরো)।
রত্নার বয়স-মাত্র পঁয়ত্রিশ ছুঁই ছুঁই..আজ থেকে বছর
দুই আগে থেকেই রত্নার শরীরের একটি অংশে শুরু হয় রোগটির বাসা বাঁধা,প্রথম থেকেই অবহেলা করে রত্না, কাউকে কিছু জানায়নি ও,শেষে আর সহ্য করতে না পেরে জানায় দেবাশীষ কে। দেবাশীষ একটি বেসরকারি
সংস্থায় কর্মরত...আর তাই ইচ্ছে থাকা সত্বেও সংসারকে খুব বেশী সময় দিতে পারতো না ।
ফলে অবহেলায় অভিমানে রত্নার চিকিৎসায় ভাঁটা পড়ে
অনেকখানি,অসহায় দেবাশীষ বহুবার রত্না কে বোঝায় ওর চিকিৎসায় যেন হেলাফেলা না করে
রত্না, অভিমানী মেয়েটা শোনেনি কোনও কথাই । সমস্ত পরীক্ষার পর
বোঝা যায় রত্নার ব্রেস্ট ক্যান্সার হয়েছে এবং রোগটি অনেক দিন বিনা চিকিৎসায় থাকার
ফলে অনেকখানি প্রসারিত হয়ে গেছে । ডাক্তাররাও নিরুপায়,তবু
চেষ্টা হয় অনেক,যম এক্ষেত্রে টানাটানি করেছিল কিনা জানা নেই
তবে...রোগে আর ডাক্তারে প্রচুর টানাটানি হয়েছে অনেক, শেষে
হার মানে ডাক্তারের দল রোগের কাছে !
দিনে দিনে শুকিয়ে যেতে থাকে রত্না,
ধিকিয়ে ধিকিয়ে মৃত্যুর জন্য প্রহর গোনে ও। দেবাশীষ বহু রাত জেগেছে,অনেক সেবা করেছে,অনেক ক্ষমাও চেয়েছে তবু আটকাতে পারে
নি। সবাই হেরে গেছে-ক্যান্সার নামক রাজ রোগের কাছে...হ্যাঁ, হেরে
গেলো ওরা । রত্নার আর নিশ্বাস পড়ছে না,শেষ চোখের জলের
ফোঁটাটিও পড়ে গেছে ওর চোখ থেকে।
রত্না মারা যাওয়ার ঠিক তিনদিন পরে রত্নার শেষ বেলায়
লেখা ডাইরির নোটটি পড়ে দেবাশীষ,তাতে শুধু ক্ষমা
চেয়েছে রত্না কলির কাছে,দেবাশীষের কাছে আর নিজের এই অসময়ে মৃত্যুর
জন্য নিজেকেই দায়ী করেছে রত্না ।
(নারী-পুরুষ নির্বিশেষে এই রোগটি হয়,প্রথম থেকে
ঠিকমতো চিকিৎসা হলে এই রোগ নির্মূল হতেই পারে,আর তাই আমার
সকল পাঠক বন্ধুদের কাছে একান্ত অনুরোধ আপনাদের জানা এই রোগের রুগীদের যথাসময়ে
চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ জীবনের পথে ফিরিয়ে আনুন ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন