প্রথম বর্ষ, শারদ সংখ্যা, ১২ অক্টোবর' ২০১৫

সোমবার, ১২ অক্টোবর, ২০১৫

অণু গল্প

জয়িতা দে সরকার
দূর্গাপুর, বর্ধমান

                                       
                                        ইতি বলি নাকি!
        আধুনিক সমাজটার সাথে এখন আর খাপ খাওয়াতে পারে না মাধু ! কেন জানিনা ! তবে এই সমাজটার উপর অদ্ভুত একটা রাগ, একটা ভালো না লাগায় ওকে পেয়ে বসছে প্রতিদিন, সমস্ত রকম আধুনিকতা ধীরে ধীরে বর্জন করছে মেয়েটি একটা মোবাইল ফোন পর্যন্ত সে আর ব্যবহার করতে চায় না এখন, কষ্ট হলেও ঘরের ল্যান্ডফোনেই সকলের সাথে যোগাযোগ রাখে, যেটুকু দরকার অথচ এই মেয়েটিই একটা সময় আধুনিক সমাজের তোয়াক্কা না করে আরও আধুনিক হয়েছে, দুরন্ত গতিতে ছুটেছে,পারলে ও সময়ের আগে ছুটেছে
মধুশ্রী বর্মণ, বিদ্যায়, বুদ্ধিতে, ভাবনা, চিন্তায় সবার থেকে আলাদা স্কুল থেকে ইউনিভার্সিটি পড়ালেখার চার্টে কোনওদিন 'দ্বিতীয়' শব্দটি আসেনি যেমন পড়াশুনা, তেমন রূপ, তেমনই ভদ্র স্বভাব সমস্ত দিক থেকে তার দিকে একটি আঙুলও তোলার সাহস বা ইচ্ছে কারুরই নেই
আজ একসাথে দুদুটো আনন্দ মধুশ্রীর জন্য অপেক্ষা করছে, চাকুরির পরীক্ষার ফলাফল পাবে আজ এবং বিকালে ওর জীবনের অন্য পর্বের শুভারম্ভ, ওর আর অভিজিতের আংটি বদল
অনুষ্ঠান, মাস দুয়েক পরে বিয়ে অভিজিৎ ওর বাল্যসখা, একসাথেই বড়ো হওয়া, একসাথেই পড়ালেখা ওরা দুজনেই আজ খুব খুশি, একসাথেই যাচ্ছে ফলাফল জানতে গাড়ির ড্রাইভার সিটে আজ মাধু, অভিজিতের হাত থেকে একটু মজার ছলেই গাড়ির চাবি কেড়ে নিয়েছিল ও, বারন করলেও শোনেনি
জীবনের রঙ্গমঞ্চের এখন পর্যন্ত এক সফল  খেলাড়ি ওরা, বিশেষ করে মাধু কোনও বিষয়ে ওকে হারায় এমন সাধ্যি কার ! একমাত্র অভিজিৎ ওর সমকক্ষ, তবুও ছেলেটি বড্ডো শান্ত, ও নিজের সমস্তটুকু মাধুকে উজার করে দিয়ে বিনিময়ে মাধুর প্রানখোলা বিজয়িনীর হাসিটা দেখতে চিরদিনই ভালোবাসে, আর তাই এক নম্বর কম পেয়ে দ্বিতীয় হতেও ওর কষ্ট হয়নি আজ অবধি আর ওর এই ভালোবাসা অনুভব করে মাধু
     হাইরোড ধরে গাড়ি ছুটছে, খুশি অফুরান...দুজনেই আজ ভীষন এক্সাইটেড, মাধু বোধহয় আজ একটু বেপরোয়া ড্রাইভ করছিলো, দু-একবার বারনও করে অভিজিৎ, শোনেনি খুশি বাঁধ ভাঙলে এইরকম বোধহয় হয় ! বিকট একটা শব্দ, আর কিছু মনে নেই,সব অন্ধকার ! দিন দুই পরে নার্সিংহোমের বিছানায় চোখ খোলে মধুশ্রী, জ্ঞান ফিরলে বুঝতে পারে, হুইল চেয়ার সর্বস্ব বাকি জীবন ! আরও দিন দুই পরে অভিজিতের সাথে দেখা হয় নার্সিংহোমেরই
আই.সি.ইউ ইউনিটে, ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে ওকে দেখছে অভিজিৎ, চোখ বাদে বাকি সমস্ত অঙ্গ অচল।
আজ প্রায় বছর পাঁচেক পরেও একইভাবে বেঁচে আছে ওরা...আধুনিকতা ওদের জীবন বদলাতে পারেনি আর....তাই ধীরে ধীরে সমস্ত আধুনিকতা বর্জন করে হেরে যেতে চায় মাধু, ভুলে যেতে চায় ওর সম্পূর্ন অতীতের দিনগুলোকে। সময় অতিবাহিত না হলে জীবনের মৃত্যু হয়না, বহু কষ্ট স্বীকার করেও বেঁচে থাকতে হয় আমাদের সকলকে, ওরাও বেঁচে আছে আমাধু এই পাঁচ বছরে প্রতিদিন অভিজিতের ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে খুঁজে পায় খালি চোখের জল আর একটাই প্রশ্ন- "ইতি বলি নাকি?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন