প্রথম বর্ষ, শারদ সংখ্যা, ১২ অক্টোবর' ২০১৫
মঙ্গলবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১৫
রবিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০১৫
সম্পাদকীয়
শুভ বিজয়ার প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানাই সকল পাঠক-পাঠিকাকে |
সম্পাদকীয়
বাঙালির সবচেয়ে বড় আনন্দের উৎসব
দুর্গা পুজো সদ্য শেষ হল । শেষ নয় বলা ভাল আবার শুরুর জন্য সাময়িক বিরতি নেওয়ার
সময় এখন । কোন কোন মা দুর্গা যথারীতি নিয়ম মেনে দেবাদিদেবের কাছে চলে গেলেন ।
দশমীর বিষাদের সুর বেজে উঠলো সেখানে । কোন কোন মা দুর্গা আবার স্বামীর কথা অগ্রাহ্য
করে ছুটির দুদিন এক্সটেনশন করিয়ে নিলেন । কাকে দিয়ে সেই ছুটি কোন রীতি মেনে
গ্রান্ট করালেন, সেটা আবার স্বয়ং মহাদেব বুঝতে
পারলে হয় । শুভ বিজয়ার প্রীতি ও
শুভেচ্ছা-র ঢল যতটা সাক্ষাতে না দেখা গেল তার চেয়ে ঢের বেশী দেখা গেল হাওয়ায় । এস
এম এস, ফেসবুক, টুইটার আরও কত কিসে যে
কোথাকার শুভেচ্ছা কোথায় উড়ে গেল তার হিসাব রাখতে আজকের ডিজিটাল বিশেষজ্ঞরাও হার
মানলেন । বিজয়ায় কোলাকুলি বা প্রণামের ছোঁয়া এখন বেশ একটা প্রাগৈতিহাসিক অনুভব এনে
দেয় মনে । হ্যান্ডশ্যাক বিজয়াও আজ সেকেলে । এখন জি আই এফ ফটোর শুভেচ্ছায় বিজয়া দশমী
হাল ফ্যাশানের দারুণ মার মার বাজার । আমরা এগোচ্ছি বেশ । থেমে থাকা মানে তো,
জড় পদার্থ । আমরা প্রাণ-মাধুর্যে ভরপুর অতএব এগতে তো হবেই । তাতে
সংস্কৃতি একটু ভাঙলে কোন দোষের কিছু হয় কি না তা যাদের ভাবার তারা ভাবুন । আমরা
ডিজিটালের প্রাণ বায়ুতে নাক খুলে নিঃশ্বাস নিচ্ছি আপাতত ।
সূচিপত্রে ক্লিক করে পড়ুন ।
পাঠক-পাঠিকাদের কাছে অনুরোধ সবার লেখা পরুন। আপনার ভালোলাগা লেখাটির লিঙ্ক
সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন । ইচ্ছে ডানা-র পাঠক সংখ্যা তাতে বৃদ্ধি পাবে । আমরাও
একটু উৎসাহিত হব ।
এবার পুজোর সেলফি কথন
সেলফির
ভাষা চর্চা
শুধু
সেলফি তুললেই হবে না, একখান জু-জুতসই ক্যাচিং ক্যাপশনও দেওয়া চাই ।
তাই
সেলফির উপরে চটজলদি লেখা----
“ইট’জ-জ-জ শুধুই-ই-ই মি-ই-ই”
সেলফির
গণ আন্দোলন
প্রতি
প্যান্ডেলের সামনে এবং মায়ের মূর্তির সামনে ফ্রী সেলফি জোন রাখতে হবে । পুলিশের
নিষেধ মানছি না মানব না ।
সেলফির
আত্মকথা
নিজস্বী
বলবেন না প্লিজ । ওতে আবার একটু নিজস্বতার ছোঁয়া আছে । আমাদের সবটাই জনগণের শিল্প
কলা । সেলফিতে আমরা নিজস্বতার ধার ধারি না ।
“সো নো নিজস্বী, ইট’জ অনলি সেলফি”
সেলফির
নাচতে না জানলে উঠোন বাঁকা
‘ফল
অফ ফ্রেম’ পুজোতে আমার সেলফি । অন্তত প্যান্ডেলের জন্যও ৫০০০ লাইক না পড়লে বুঝবো
পুরস্কারগুলোতে ডাল মে কুছ কালা থাকে ।
সেলফির
কসম
‘কার্তিক’-এর থেকেও ‘কার্তিকেয় আমি’ শুধু একটা সরকারী চাকুরে, সুন্দরী, শিক্ষিত, ধনী বাপের
একমাত্র কন্যা একটা কন্যে জুটিয়ে দাও মা । প্লিজ প্লিজ মা... তোমার সাথে আমার
সেলফির কসম হেভভি ডোনেশন ঢালবো পরের বার ।
সেলফির
বাণিজ্য কথন
আমরা
সেলফি পোজের ফটো তুলি । সাথে লাস্ট টাইম সাজেশনের মতো লাস্ট টাচ মেক-আপ ও ফলস চুল
ফ্রি
সেলফির
কাব্যচর্চা
পুলিশ
তুমি ফুলিশ
সেলফি
তুলতে করছ বারণ
গণতান্ত্রিক
অধিকার হরণ
প্রধানমন্ত্রীও
মুখ্যমন্ত্রীও সেলফি তোলে
সেবালায়
কিছু হয় না
তখন
তেলা মাথায় তেল মালিশ
এই
হাত তোমার আমার
এই
সেলফি তোমার আমার
শুধু
দুজনের
তুমি
আছো আমি আছি তাই
শুধু
সেলফিতে খুঁজে যেন পাই
এই
হাত তোমার আমার
শুধুই
দুজনের
ইতি--ইসস্মার্ট
দূর্গা
মর্তে
সেলফির বাজার দেখে আমিও একজনের থেকে স্মার্টফোন চেয়ে নিয়ে একটা সেলফি তুললাম ।
লোকটা বলল, শিব বাবা এবার বুঝবে তার উমা কেমন ইসস্মার্ট হয়েছে । কথাটা শুনে ভাবছি,
না তাকে এটা দেখাব কিনা ? যদি আবার পরের বার থেকে বাপের বাড়ী আসতে না দেয় ?????
প্রচ্ছদ প্রতিবেদন
অরুণিমা চৌধুরী
ব্যারাকপুর, কোলকাতা
স্তন ক্যান্সার
আসুন বাঁচি, হাতে
হাত বেঁধে থাকি...
'ক্যান্সার' শব্দটি শুনলেই মনের কোণে
গুঁড়ি মেরে একটা ভয় ঢোকে । কিছু মানুষ মনে করেন “
ইগনোরেন্স ইজ দ্য ব্লিস । আমার তো হয়নি, হলে
দেখা যাবে ।” চোখ কান বুজে পাশ কাটিয়ে দিতে পারলেই হল ।
রক্ষণশীল মনোভাব,
অহেতুক ভয় ও অজ্ঞতা অনেক ক্ষেত্রেই জীবননাশের কারণ হয়ে দাঁড়ায় । বিশেষত
বিষয়টি যখন স্তনের ক্যান্সার ।
অক্টোবর মাস আমেরিকান ক্যান্সার
গবেষণা কেন্দ্র দ্বারা ঘোষিত 'ব্রেস্ট ক্যান্সার
মাস' ।
'টাইমস অফ ইন্ডিয়া'
পত্রিকায় প্রকাশিত 'ম্যাক্স সুপার
স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল'এর একটি রিপোর্টের ভিত্তিতে জানা গেছে
ভারতে, প্রতি আঠাশ জন মহিলার মধ্যে একজনের স্তন ক্যান্সারে
আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল । পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৬৫ -
৭০ % স্তন ক্যান্সার আক্রান্ত ভারতীয় মহিলার গড় বয়েস ৫০ এর উপরে । মাত্র
৩০-৩৫% রোগিণী ৫০ বছর বয়েসের আগেই স্তনের ক্যান্সারে আক্রান্ত হন । ম্যাক্স সুপার
স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের,
সিনিয়র কন্সাল্ট্যান্ট অফ সার্জিকাল অঙ্কোলজি-র ডাক্তার ডঃ বিবেক গুপ্তা জানিয়েছেন, ২০১৫ সালের
মধ্যে ভারতে স্তন ক্যান্সারের নতুন রোগিণীর সংখ্যা দাঁড়াবে ১,৫৫,০০০ জন এবং তাদের মধ্যে ৭৬০০০জন মহিলারই এতে
মৃত্যু হবে । ডাক্তার রুদ্র আচার্যের মতে ভারতে স্তন ক্যান্সারে ব্যাপক মৃত্যুর
একমাত্র কারণ হল, রোগ নির্ণয়ে অহেতুক দেরী ।
ভারতের মত তৃতীয় বিশ্বের দেশে ক্যান্সার রোগটির
সঙ্গে জড়িয়ে থাকা অনেক ভয়, কুসংস্কার প্রচুর
রোগিণীর মৃত্যুর কারণ । প্রথমত বলে রাখা ভাল, যেকোনো
ক্যান্সারের মত স্তন ক্যান্সারেও সেরে ওঠার জন্য, প্রাথমিক
স্তরে রোগনির্ণয় খুব জরুরী । আমাদের দেশে মহিলাদের মধ্যে সচেতনতার অভাব রোগ
নির্ণয়ের পক্ষে সবচেয়ে বড় বাধা ।
যেকোনো রোগের মতোই এক্ষেত্রেও
"প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিওর"-এই বেদবাক্যটি মেনে চললে,
জীবনের ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব । তাই প্রতি মাসে, একবার
নিজেই স্তন পরীক্ষা করা অত্যন্ত জরুরী । স্তনে অস্বাভাবিক কোন ব্যথাযুক্ত, বা ব্যথাবিহীন মাংসপিণ্ড অনুভূত হলে, স্তনের কোন
একটি স্থান লাল হয়ে থাকলে, স্তনগাত্রের ত্বক কমলালেবুর খোসার
মতো ঈষৎ ছিদ্রযুক্ত দেখালে, স্তনবৃন্তটি বসে গেলে (ইনভার্টেড
নিপল) অথবা বৃন্ত থেকে কোন রস গড়ালে, যথা শীঘ্র সম্ভব কোন
স্তনরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন ।
শুনতে সোনার পাথরবাটি মনে হলেও,
স্তনের ক্যান্সার পুরুষেরও হয় । এবং সেক্ষেত্রে জীবনের ঝুঁকি যে কোন
মহিলার তুলনায় বেশি।
রোগ নির্ণয়ের জন্য চিকিৎসক,
ইউ এস জি, সিটি স্ক্যান, ম্যামোগ্রাম বা 'ফাইন নিডল অ্যাস্পিরেশন' বা 'এফ এন এ সি' করাতে পরামর্শ
দিতে পারেন । অযথা ভয় পাবেন না । উপরের লক্ষণগুলোর যে কোন একটি দেখা দিয়েছে,মানেই যে ক্যান্সার হয়েছে, তা নাও হতে পারে । আবার,
একথাও ভাবা ঠিক নয়, যে সূঁচ ফুটিয়ে পরীক্ষা
করলেই ক্যান্সার হয়ে যাবে বা দ্রুত রোগ ছড়িয়ে পড়বে ।
রোগ নির্ণীত হলে,
অযথা সাউথে বা মুম্বাইতেই ছুটতে হবে, এ ধারণাও
ভিত্তিহীন । আপনার নিকটবর্তী সরকারী হাসপাতালটিতেও চিকিৎসা করানো যেতে পারে ।
এবার আসি, চিকিৎসার ধাপগুলিতে । প্রথমেই
একজন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ বা অঙ্কোলজিস্টের পরামর্শ নিন । তিনি কিছু পরীক্ষা
নিরীক্ষা করে সিদ্ধান্ত নেবেন চিকিৎসা কোন পথে এগোবে । যদি, চিকিৎসক
মনে করেন, আগে স্তনের অপারেশন করিয়ে, তারপর
কেমোথেরাপি চালু করবেন । এই পদ্ধতিকে বলে, অ্যাডজুভ্যান্ট
কেমোথেরাপি । আবার, আগে কয়েকটি কেমোথেরাপি দিয়ে, মাংসপিন্ডটি ছোট করে নিয়ে যদি অপারেশন করা হয়, সেই
পদ্ধতিকে বলা হয় নন অ্যাডজুভ্যান্ট কেমোথেরাপি । অপারেশনটি দুভাবে হতে পারে ।
রোগগ্রস্ত মাংসপিণ্ডটি ও তৎসংলগ্ন কিছু টিস্যু কেটে বাদ দিলে, সেটিকে ডাক্তারি পরিভাষায় বলে, 'লাম্পেক্টমি'
। আর পুরো স্তন,
বক্ষপেশির কিছু অংশ এবং বগলের গ্রন্থি বা লিম্ফ নোডস গুলি যদি বাদ
যায়, তাকে বলে 'মাস্টেক্টমি' । এবার বলি,
প্রতিটি রোগিণীর রোগের চরিত্র আলাদা, শারীরিক
অবস্থা আলাদা ।এসব কিছুর উপর ভিত্তি করেই চিকিৎসক ঠিক করেন কিভাবে চিকিৎসা এগোবে ।
স্তনের ক্যান্সার কিন্তু একটি রোগ
নয় । প্রাথমিকভাবে কোন জায়গায় হয়েছে, তার
উপর ভিত্তি করে স্তন ক্যান্সার দুইপ্রকার-লোবুলার কার্সিনোমা, ও ডাক্টাল কার্সিনোমা । চরিত্রগত ভাবে আবার স্তন ক্যান্সারের তিনটি টাইপ ।
তাদের আবার বেশ কতগুলি সাবটাইপ আছে । মোটের উপর টাইপগুলি হচ্ছে,
১.হরমোন পজিটিভ ব্রেস্ট ক্যান্সার
২.হার টু(2)
পজিটিভ ব্রেস্ট ক্যান্সার
৩.ট্রিপল নেগেটিভ ব্রেস্ট
ক্যান্সার
প্রতিটি টাইপের চিকিৎসা আলাদা ।
তাই পরিচিত অমুকের তো এই ওষুধ দিয়ে সেরে গেছে সুতরাং আমাকেও এই ওষুধ দিন । এইধরনের
ব্যাপারগুলো সম্পূর্ণ যুক্তিহীন । রুগীর শরীর, রোগের
ব্যাপ্তির উপর নির্ভর করে, কেমোথেরাপি কতদিন পরপর দেওয়া হবে,
ডাক্তার তা ঠিক করেন । কেমোথেরাপি চলা কালীন কিছু বাড়তি সতর্কতা
আবশ্যক । এসময় দ্রুত বেড়ে ওঠা ক্যান্সার কোষগুলো যেমন মারা যায়, তেমনি রক্তকোষ ও দেহের অন্য সুস্থ কোষগুলিও মারা যায় । মাথার চুল ও দেহের
সব রোম উঠে যায় । শ্বেত রক্তকোষ মারা যাবার ফলে, রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায় । তাই,কেমোথেরাপি চলাকালীন
রুগীকে অত্যন্ত সাবধানে রাখতে হবে ।
শুধু কেমোথেরাপি, অপারেশন মানেই চিকিৎসা শেষ নয় । অনেক ক্ষেত্রেই রেডিয়েশন থেরাপিও দরকার হয়
। এরপর রোগের টাইপ, সাবটাইপের উপর ভিত্তি করে বেশ কয়েক বছর
টানা ওষুধ খেতে হতে পারে । এই ওষুধপত্র কে ডাক্তারি পরিভাষায় বলে 'টার্গেটেড থেরাপি'।অর্থাৎ ঠিক যে কারণে স্তন ক্যান্সারটির উৎপত্তি,
সেই কারণটিকেই ওষুধ দ্বারা নষ্ট করে দেওয়া । বর্তমানে 'হরমোন পজিটিভ ব্রেস্ট ক্যান্সার' এবং 'হার টু পজিটিভ ব্রেস্ট ক্যান্সার'এর টার্গেটেড
থেরাপি থাকলেও 'ট্রিপল নেগেটিভ ব্রেস্ট ক্যান্সার'এর টার্গেটেড থেরাপি এখনো আবিষ্কৃত হয়নি । তবে,প্রচুর
সম্ভাবনাময় ওষুধের ট্রায়াল চলছে ।
স্তনের ক্যান্সার সাধারণত অনেক
সময়েই আরেকটি স্তনে,
যকৃত, ফুসফুস, মস্তিষ্ক,
ও হাড়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে । রোগের এই ব্যাপ্তি সাধারণত রোগের শেষ
পর্যায় । একে মেটাস্টাসিস বলে ।
চিকিৎসা পরবর্তী জীবনে সবথেকে
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হল, নিয়মিত চিকিৎসকের
পরামর্শে থাকা, ফলো আপ করানো । কারণ, প্রাথমিকভাবে
রোগ সেরে গেলেও ফিরে আসার সম্ভাবনা প্রবল থাকে, বিশেষত
রোগনির্ণয়ের প্রথম দুটি বছর । (রোগ ফিরে এলে,অর্থাৎ
রেকারেন্স বা মেটাস্টাসিস হলেও চিকিৎসা সম্ভব।) আর দরকার, সংযমী
জীবনযাপন । ধূমপান বর্জন দরকার । নিয়মিত আঁশযুক্ত (ফাইবার সমৃদ্ধ) খাবার, প্রচুর পরিমাণে রঙিন ফল ও শাক সবজি খেতে হবে, অন্তত
পাঁচদিন সপ্তাহে তিরিশ মিনিট ব্যায়াম করতে হবে ।
পরিশেষে বলি,
স্তন ক্যান্সার মানেই মৃত্যু নয় । প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ ধরা পড়লে
বহুদিন সুস্থ থাকা যায় । আমাদের চারপাশে, বহু নামকরা মানুষ,
বহু অচেনা অজানা মানুষ কিন্তু রোগটি কে জয় করে সুস্থ জীবনযাপন করছেন
। স্তন ক্যান্সার জয় করা সম্ভব । শুধু দরকার দ্রুত রোগনির্ণয় ও কু-সংস্কারমুক্ত সঠিক
চিকিৎসা । আসুন বাঁচি ।
হাতে
হাত ধরে অন্যকে বাঁচাই ।
(পরিসংখ্যান তথ্যসূত্র সৌজন্য:'টাইমস অফ ইন্ডিয়া')
প্রচ্ছদ প্রতিবেদন
স্তন
ক্যান্সারের ঝুঁকি কাদের বেশী
#
পুরুষদের চেয়ে নারীদের স্তন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেশি
#
৫০ বছরের বেশি বয়সী নারীদের
#
একটি স্তনে ক্যান্সার হলে অপরটিও আক্রান্ত হতে পারে
#
জীনগত কারণে
#
অস্বাভাবিক মোটা হলে
#
অল্প বয়সে মাসিক হলে
#
বেশি বয়সে মনোপজ হলে
#
বেশি বয়সে প্রথম বাচ্চা নিলে । ৩০ বছরের পরে যারা
প্রথম মা হয়েছেন তাদের স্তন ক্যান্সারের প্রবণতা একজন কমবয়সী মা হওয়া মহিলাদের
থেকে অনেক বেশি
#
যারা সন্তানকে কখনো স্তন্য পান করাননি তাদের ব্রেস্ট ক্যান্সার বেশি হয়
#
অবিবাহিতা বা সন্তানহীনা মহিলাদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের প্রকোপ বেশি
#
একাধারে অনেক দিন জন্ম নিরোধক বড়ি খেলেও স্তন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে
#
যেসব নারী হরমোন থেরাপী নেন
#
মদ্য পান করলে
লক্ষণ
নিচের লক্ষণগুলো দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ডাক্তারের কাছে যান ।
# স্তনে নতুন এবং অস্বাভাবিক মাংসপিন্ড অনুভব করলে
# পরবর্তী মাসিক পার হয়ে গেলেও সেই মাংসপিন্ড মিলিয়ে না গেলে
# পিন্ড আরও বড় এবং শক্ত হলে
নিচের লক্ষণগুলো দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ডাক্তারের কাছে যান ।
# স্তনে নতুন এবং অস্বাভাবিক মাংসপিন্ড অনুভব করলে
# পরবর্তী মাসিক পার হয়ে গেলেও সেই মাংসপিন্ড মিলিয়ে না গেলে
# পিন্ড আরও বড় এবং শক্ত হলে
# মাংসপিন্ডের সাথে
স্তনে ব্যথা অনুভব করলে
# যে বুকে ব্যথা সেদিকের হাত ফুলে গেলে
# স্তনের বোঁটা থেকে অনবরত রক্ত বা তরল নির্গত হলে
# স্তনের ত্বকে পরিবর্তন দেখা দিলে
# স্তনের বোঁটা ভিতরের দিকে ঢুকে গেলে
# বুকে ফুলকপির মত কোনরকম ঘা হলে
# স্তনের বোঁটা থেকে অনবরত রক্ত বা তরল নির্গত হলে
# স্তনের ত্বকে পরিবর্তন দেখা দিলে
# স্তনের বোঁটা ভিতরের দিকে ঢুকে গেলে
# বুকে ফুলকপির মত কোনরকম ঘা হলে
স্তন
ক্যান্সারের প্রতিকার
যেহেতু
এ রোগটির নির্দিষ্ট কোনো কারণ এখনো জানা যায়নি, তাই
এটি এড়ানোর জন্য নির্দিষ্ট কোনো উপায়ও বলা যায় না । তবে স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধের
সবচেয়ে ভালো উপায় হলো নিজেদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো । কেবল জীবনধারার
পরিবর্তন বিশেষ করে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানো সম্ভব । এছাড়া এমন কিছু বিষয়
আছে যা মেনে চললে স্তন ক্যান্সার প্রতিকার করা সম্ভব ।
মেনে
চলুন নিম্নোক্ত বিষয়-
#
২০ বছর বয়স থেকে নিজে নিজে ব্রেস্ট পরীক্ষা করুন
#
৩০ বছর বয়সের মধ্যে প্রথম সন্তান জন্ম দেওয়ার চেষ্টা করুন
#
সন্তানকে বুকের দুধ পান করান নিয়মিত
#
খাবার দাবারের ক্ষেত্রে চর্বিযুক্ত খাবার পরিত্যাগ করুন
#
ফলমূল এবং সবজি বেশি খাওয়ার অভ্যাস করুন
#
ভিটামিন ‘এ’ এবং ‘সি’ জাতীয় ফলমূল খাওয়ার চেষ্টা করুন
#
যেসব খাবারে বেটা ক্যারোটিন রয়েছে, যেমন গাজর,
মিষ্টি আলু এবং সবুজ শাক বেশি বেশি খাওয়ার অভ্যাস করুন
#
নিয়মিত ব্যায়াম করুন
#
যাদের ওজন বেশি তাদের অবশ্যই ওজন কমাতে হবে ।
#
মানসিক চাপ থাকলে সাইকোথেরাপিস্টের পরামর্শ নিন ।
#
ধূমপান ও অ্যালকোহল ত্যাগ করুন ।
প্রচ্ছদ প্রতিবেদন
মদ্যপানে মহিলাদের স্তন
ক্যান্সার হওয়ার আশংকা বৃদ্ধি পায়
সম্প্রতি
গবেষণায় জানা গেছে, প্রতিদিন এক গ্লাস করে ওয়াইন পান করলে নারীদের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি
বাড়ে। গবেষণাটি করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের হাভার্ড টি এইচ চ্যান
স্কুল অব পাবলিক হেলথ-এর গবেষকরা । এতে গবেষকরা জানিয়েছেন, মাঝারি মাত্রায় অ্যালকোহল পানেও নারীদের
মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে ।
অ্যালকোহল
পানে বহু ঝুঁকি রয়েছে । এসব ঝুঁকির মধ্যে কোলন ক্যান্সার ও লিভার ক্যান্সার অন্যতম । এ তালিকায় এবার যোগ হলো নারীদের স্তন ক্যান্সারের
ঝুঁকিও ।
এই
গবেষণার জন্য গবেষকরা অ্যালকোহল পান করে এমন কিছু পুরুষ ও নারীকে নির্বাচিত করেন । এরপর তাদের কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয় । এরপর তাদের মধ্যে ধূমপায়ী ও অধূমপায়ীদের পৃথক করা
হয় । এর উদ্দেশ্য ছিল শুধু
অ্যালকোহল পানের কারণে ক্যান্সারের সম্ভাবনা নির্ণয় ।
গবেষণায়
অ্যালকোহল পানে অভ্যস্তদের ক্যান্সারের হার বেশি দেখা যায় । বিশেষ করে অ্যালকোহল ও ধূমপান যারা একত্রে করে, তাদের এ ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি দেখা
যায় ।
এই
গবেষণায় আরেকটি বিশেষ দিক পাওয়া যায় নারীদের স্তন ক্যান্সারের সঙ্গে অ্যালকোহলের
সম্পর্ক আবিষ্কারে । যেসব নারী শুধু অ্যালকোহল পান করেন কিন্তু ধূমপান করেন না, তাদেরও স্তন ক্যান্সারের হার বেশি
পাওয়া যায় ।
গবেষণায়
অন্তর্ভুক্ত করা হয় ৮৮,০৮৪ জন নারী এবং ৪৭,৮৮১ জন পুরুষকে । এই গবেষণায় তাদের ১৯৮০ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত
পর্যবেক্ষণ করা হয় ।
গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালে ।
তথ্য সুত্রঃ ‘দি গ্লোবাল নিউজ’
গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালে ।
তথ্য সুত্রঃ ‘দি গ্লোবাল নিউজ’
প্রচ্ছদ প্রতিবেদন
স্তন
ক্যান্সারে চিকিৎসার সাথে সাথে প্রয়োজন মানসিক আনন্দ
কেউ যখন স্তন
ক্যান্সারে আক্রান্ত্র হন তখন তা
যে কেবল তার উপর প্রভাব ফেলে তাই নয়, পরিবার, বন্ধু-বান্ধব,
আত্মীয়-স্বজনের উপরও
এর প্রভাব ফেলে । বিশেষ করে জীবন সঙ্গীকে মারাত্মক রকমের প্রভাবিত হতে দেখা যায় ।
সংকটাপন্ন এমন রোগীর জন্য, চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় জীবন সঙ্গীর
সাহায্য, সহানুভূতি, অবলম্বন ও ভালোবাসা খুবই প্রয়োজন ।
স্তন ক্যান্সার চিকিৎসা যখন চলে, নানা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা যায়
রোগীর শরীরে। অস্ত্রোপচার করা হলে এবং লসিকাগ্রন্থি সরিয়ে নিলে ফুলে যায় বাহু ।
কেমোথেরাপি নিলে হয় বমি বমি ভাব, বমি, কেশহানি, ক্ষুধামন্দা ও ওজন হ্রাস । বিকিরণ
চিকিৎসায় অবসাদ, ক্লান্তি, স্তনে ব্যথা,
স্তন আয়তনে পরিবর্তন
ইত্যাদি ইত্যাদি । শারীরিক কষ্টে ও মানসিক দ্বন্দ্বে রোগীর আবেগ মেজাজেরও পরিবর্তন
হয় ।
প্রিয়জনের স্তন ক্যান্সার হলে তাকে অবলম্বন দিতে
হবে । আপাত: দৃষ্টিতে এটা সহজ মনে হলেও বাস্তবে তা সব সময় হতে দেখিনা আমরা । শুধু
সঙ্গে থাকলেই হবে না, রোগীর প্রতিটি বিষয়কে বোঝার চেষ্টা করতে
আন্তরিকভাবে । প্রিয় খাবারও অনেক সময় রোগীর কাছে বিস্বাদ হয়ে উঠে । এমন কিছু
চিকিৎসা আছে যা নেওয়ার পর আগের প্রিয় খাবার তখন ভালো লাগে না । অনেকে স্বাভাবিক
সময় যে খাদ্য উপভোগ করতেন এসব খাবার এখন এড়াতে চাইতে পারেন । অনেক নারী চান
ডাক্তারের কাছে যেন তাঁর জীবনসঙ্গী তাকে নিয়ে যান এবং সঙ্গে থাকেন । চিকিৎসা হোক
বা মামুলী চেক আপ হোক, ডাক্তারের সঙ্গে এমন সেশন বেশ ক্লান্তিকর হয়ে উঠে
এক সময় । সে সময় কেউ যদি পরামর্শগুলো নোটবুকে টুকে নেন,
দেখভাল করেন,
পরে বাড়ি নিয়ে যান
তখন রোগী বেশ স্বস্থি অনুভব করেন । যতটুকু অন্তরঙ্গ হলে রোগী স্বস্তি পান ততটুকু
তাকে দিলে ভালো । চিকিৎসায় যৌন ইচ্ছা কমে যেতে পারে কিন্তু শারীরিক ঘনিষ্ঠতা তিনি
চাইতে পারেন । সেদিকে খেয়াল রাখবেন জীবন সঙ্গী ।
মানুষ যখন চাপে থাকে তখন মন খুলে কথা বলার লোক পেলে
মানুষ স্বস্তি পায় । আশ্রয় খোঁজে কারো, যিনি কান পেতে তার কথাগুলো শুনবেন,
শেয়ার করবেন তার
সঙ্গে । জীবন সঙ্গীর কাছে এমন চাহিদা থাকতেইে
পারে । গবেষণায় দেখা গেছে চিকিৎসা চলার সময় দম্পতি যখন মন খুলে কথা বলেছেন,
সেক্ষেত্রে রোগীর
দুর্ভোগ অনেক কমে, সম্পর্কের তুষ্টিও হয় এতে বেশি । রোগ নির্ণয়ের পর
অনেক সিদ্ধান্ত নিতে হয়, সেসময় জীবন সঙ্গীর সক্রিয় ভূমিকা বাঞ্ছনীয় ।
প্রয়োজন হতে পারে দ্বিতীয় মত নেওয়ার । জীবন সঙ্গীকে ভালো শ্রোতা হতে হয় । সঙ্গী ভয়
পেলে সে ভয়কে স্বীকার করে তাকে আশ্বস্ত করতে হয় । চট জলদি সমাধান দেবার লোভ
সামলানো উচিত, হয়ত এরকম করলে তার উদ্বেগকে তুচ্ছ করার মত ব্যাপার
ঘটে, অন্তত:
রোগী তা মনে করতে পারেন, আর এরকম মনে হলে অভিমানে হয়ত মনের দুঃখ কষ্টের কথা
আর তিনি বলবেনই না ।
রোগীকে যেমন উৎসাহ দিতে হবে,
তেমনি চিকিৎসার
বাস্তব দিক নিয়ে সঠিক ধারণাও কৌশলে তাকে
জানানো উচিত । ধৈর্য রাখা বড় কথা । স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসায় নারীর হরমোনসমূহ
বিশৃঙ্খল হতে পারে, তখন মন মেজাজ খারাপ হওয়া,
বিরক্তির-ভাব প্রায়ই
হওয়া খুবই স্বাভাবিক । মনে জমে উঠা বাষ্প বের হবার পথও চাই তাদের । এজন্য প্রয়োজন
ক্যান্সার সাপোর্ট গ্রুপ । রোগীর ভাল লাগার সমস্ত উপায়ের আয়োজন করাটাই তাকে সুস্থ
করে তোলা বা তার আয়ুকে দীর্ঘায়ত করার একটা বড় দিক । শুধু মাত্র চিকিৎসা নির্ভর হলে
রোগ নিরাময়ের সম্ভাবনা কমে যায় ।
যিনি
রোগীর অবিরাম সঙ্গী, তিনি যেন ভেঙ্গে না পড়েন । রোগীর সাথে সাথে থাকতে
থাকতে তাকে অবলম্বন দিতে দিতে তার নিজেরও একসময় ক্লান্তি আসতে বাধ্য । ক্লান্তি,
হতাশা মনকে আছন্ন
করলেও সঙ্গী প্রিয়জনের কথা ভেবে সহ্য করতে হবে । যিনি পরিচর্যা দেন রোগীকে,
তারও চাই মন ভালো
রাখার মত কাজ করতে হবে অন্যান্য সবাই কে । একটা কথা মনে রাখা দরকার হতাশা কিন্তু
রোগীকে ঘিরে যারা থাকেন তাদের সবার মধ্যেই বাসা বাঁধে । সেই হতাশা প্রকাশ পেলে
রোগীকেও অচিরেই গ্রাস করবে । রোগীর যথাযথ অবলম্বন হয়ে উঠার জন্য সবাইকেই হতে হয়
শান্ত, স্থির,
ধৈর্যশীল ও প্রফুল্ল
। তাই সবারই উচিত হতাশায় না ডুবে গিয়ে ভাল লাগার বিষয়গুলিকে আরও বেশী করে আঁকড়ে
ধরা । রোগীর পরিচর্যাকারী বা কেয়ার লিডার
যেন বিষণ্ণতা ও উদ্বেগের শিকার না হন তাও দেখতে হবে বিশেষ যত্ন সহকারে । রোগী,
তার সবচেয়ে কাছের
সর্বক্ষণের সঙ্গী, তার কেয়ার লিডার – এদের ঘিরে থাকা প্রতিটি মানুষকেই শুধু
সহানুভূতিশীল হলেই হবে না, এদের মানসিকভাবে খুশী রাখার জন্য সমস্ত
উপায় অবলম্বন করতে হবে । সংঘবদ্ধ লড়াই রোগীকে অনেক খোলামেলা ও সাহসী করে তুলতে
পারে । স্তন ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই-এ এই সাহসের প্রচণ্ড রকম প্রয়োজন আছে ।
রোগীকে সুস্থ বা তার
দীর্ঘমেয়াদী আয়ু নির্ভর করে এর উপরেই ।
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)